বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকাবাসি
সাতদিনের সমাচার : বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনা কে কেন্দ্র করে আতঙ্ক ছাড়ালো হালিশহরে। মুখ খুলতে নারাজ ভীতস্ত এলাকাবাসি। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার হালিশহর পুরসভার 9নং ওয়ার্ডের বারেন্দ্র গলি এলাকায়। মৃত বিজেপি কর্মীর নাম সৈকত ভাওয়াল(40)। তাঁর বাড়ি স্থানীয় পুরসভার 6নং ওয়ার্ডের ডোমপাড়া লেনে। মৃত সৈকত 142নং ওয়ার্ডের বুথ সভাপতি ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন বিকেলে বিজেপি পূর্বঘোষিত কর্মসূচি 'আর নয় অন্যায়' গৃহসম্পর্ক অভিযান চলছিল। সেই সময় সশস্ত্র একদল দুষ্কৃতী বইকে চেপে এসে কিছু বুঝে ওঠার আগে তাঁদের ওপর হামলা চালায়।
দুষ্কৃতীরা বাঁশ,লোহার রড,দিয়ে বিজেপি কর্মীদের মাটিতে ফেলে পেটায়।দুষ্কৃতীদের অতর্কিত হামলায় উতপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। দুষ্কৃতীদের মারের চোটে আহত হন সাত আঠজন বিজেপি কর্মী। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে বীজপুর থানার পুলিশ। স্থানীয়দের সহযোগিতায় রক্তাক্ত জখম অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সৈকত কে মৃত বলে ঘোষণা করে চিকিৎসকরা। দুজনের শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় তাঁদের কে ভর্তি করা হয়। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান বীজপুরের বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়,থেকে শুরু করে ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি উমাশঙ্কর সিং, ব্যারাকপুর লোকসভার সাংসদ অর্জুন সিং। বীজপুরের বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় অভিযোগের সুরে বলেন,তৃণমূল নেতার সুবোধ অধিকারীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে। সৈকত কে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। অন্যদিকে এদিন রাতেই বীজপুর থানায় কয়েকজনেরে নামে অভিযোগ দায়ের করা হয় বিজেপির তরফে। থানা থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নাম করে ক্ষমতার পিপাসু বলে তাঁকে বিঁধলেন বিজেপি রাজ্য সম্পাদিকা ফাল্গুনী পাত্র। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন,রাজ্যে প্রতিদিন বিজেপি কর্মী খুন হচ্ছে!অথচ পুলিশ কনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না!পুলিশ দলদাসে পরিণত হয়েছে। নেত্রী বলেন,মানুষ ফুঁসছে,মানুষ জেগেছে বুলেটের জবাব ব্যালটে দেবে। অন্যদিকে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে হালিশহরের একটি পরিত্যাক্ত কোয়াটার থেকে সোমনাথ গাঙ্গুলী ওরফে কেলো, সুদীপ্ত ঘোষ ওরফে রাইটার বাবাই এবং সুমন সাহা ওরফে লেচ নামে তিনজন দুষ্কৃতী কে গ্রেপ্তার করে বীজপুর থানার পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে 302,325,307,120/বি ধারায় মামলা রুজু করে পরদিন অর্থাৎ রবিবার ধৃতদের ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে পাঠায় পুলিশ। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ধৃতদের বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে থানায়। পুলিশ আরও জানিয়েছে কোদালের বাট দিয়ে মারা হয়েছে সৈকত কে। এদিন ধৃতদের আদালতে তোলা হলে ধৃতদের 14দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় ব্যারাকপুর আদালত। এদিন সকালে গিয়ে দেখা যায় সুনসান থমথমে গোটা এলাকা। স্থানীয়রা ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ। সাহস করে এক ব্যক্তি বলেন, খুবই ভালো ছেলে ছিল সৈকত। কম্পিউটারের বিষয় ভালো জ্ঞান থাকায় স্থানীয় পুরসভায় অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কম্পিউটার ডিপার্টমেন্ট কাজ করত। কিন্তু বিজেপি করার অপরাধে তাঁকে কম্পিউটার বিভাগ থেকে সরিয়ে রাস্তার লাইট সারাইয়ের কাজে বদলি করে দেওয়া হয় পরিবারের ওই ছিল একমাত্র উপার্জনের সূত্র। কিন্তু তাঁকে এইভাবে রাজনৈতিক হিংসার বালি হতে হবে তা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি আরও বলেন,গত চার বছর আগে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়ে সৈকতের বাবার!তারপর থেকে সংসারের হাল ধরে সৈকত। কনোদিন কারোর সঙ্গে ঝগড়া করতে দেখেনি খুব ঠান্ডা ও মিশুকে প্রকৃতির ছেলে ছিল সৈকত। ছোটে থেকে দেখেছি!তিনি আরও বলেন,আগে কোনোদিন রাজনীতি করেনি সৈকত।ইদানিং সে বিজেপি করত, অন্যদিকে বিজেপি কর্মী খুনের প্রতিবাদে ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সরব হয় ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার কর্মীরা। রবিবার সকাল 11টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত বীজপুর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি কর্মীরা!কিন্তু বেলা 12টা নগদ হটাৎই উত্তেজনা ছড়ায়। থানার সামনে পুলিশের ব্যারিকেড ফেলে দিয়ে থানায় ঢোকার চেষ্টা করে ক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা। তখুন ধস্তাধস্তি বেঁধে যায় দুই পক্ষের মধ্যে!যদিও উত্তেজনা ছাড়াতে দেননি বীজপুর বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় ও জেলা সভাপতি উমাশঙ্কর সিং। এদিন থানা ঘেরাও কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে উমাশঙ্কর সিং শাসকদল কে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,এটাই শেষ কর্মীর রক্ত। এরপর কেউ আক্রান্ত কিংবা খুন হলে,তার পাল্টা মার দিতে প্রস্তুত!তখুন কিন্তু প্রশাসন সামাল দিতে পারবেনা। বিক্ষোভ চলাকালীন বিজেপির প্রতিনিধিদল থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেন!বিধায়ক বলেন,যাদের নেতৃত্বে এবং নির্দেশে সৈকত কে খুন করা হয়েছে। তাঁদের সবাই কে গ্রেপ্তার করতে হবে। এই খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল ষড়যন্ত্রকারিদের গ্রেপ্তার করা না হলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জারি থাকবে আন্দোলন।
No comments