আক্রান্ত স্বঘোষিত সমাজসেবী : নেপথ্যে সেই ক্ষমতা দখলের লড়াই
সুমন দে, হালিশহর : "সমাজসেবী" শব্দটা আজ সাধারণ মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ।রাজনীতির মঞ্চে দলত্যাগী নেতা হোক বা হামলার মুখে পড়া পাড়াতুতো নেতা, সংবাদমাধ্যমের সামনে একবার বলতে পারলেই হল যে 'আমার সমাজসেবা মূলক কাজকর্ম অনেকের পছন্দ হয় না বলে আমার ওপর আক্রমণ !' --যেমনটা বলছেন হালিশহর সুভাষনগর জোড়াপুকুরের বাসিন্দা গৌতম নন্দি ওরফে 'গদু' বাবু । গদু'র অভিযোগ, তার সমাজসেবা মূলক কাজকর্ম অনেকের পছন্দ হয় না, সেই কারণেই তার উপর হামলা চালানো হয় 6 ফেব্রুয়ারী বুধবার রাতে । হামলার শিকার হয় তার সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন l বীজপুর থানায় এনিয়ে অভিযোগও জানানো হয়েছে । পুলিশের পরামর্শে গদু সহ আঘাতপ্রাপ্ত কয়েকজন কল্যানী জেএনএম হাসপাতালে যায় আঘাতের চিকিৎসা (মেডিকেল) করাতে । গদু'বাবুর আরও অভিযোগ, কল্যানী হাসপাতাল থেকে ফিরতি পথে ফের দুষ্কৃতীরা তাদের আক্রমণ করে !
কিন্তু কেন বার বার তাদের উপর এই হামলা? এ নিয়ে খোলসা করে কিছুই বলতে চাননি নিজেকে সমাজসেবী হিসেবে পরিচয় দেওয়া গদু'বাবু l তিনি কেবল জানিয়েছেন, গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে সরস্বতী পূজার সময় এলাকার কয়েকজন যুবকের সঙ্গে তার বচসা হয়েছিল, হতে পারে সেই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে একবছর পরে এই হামলা l তবে গদু'র হামলা নিয়ে স্থানীয়রা কী বলছেন আসুন দেখে নেয়া যাক, প্রথমেই জানতে হবে কে এই গদু ? তার আসল পরিচয়ই বা কী ? -- স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হালিসহর ৮নং ওয়ার্ডে সিপিএম ভাবাদর্শী 'সংঘশ্রী' ক্লাবের অন্যতম সদস্য হয়ে গদু'র বেড়ে ওঠা। ২০০৭ সালে আর্মিতে চাকরি দেয়ার নামে রেলকলোনির কয়েকটি পরিবারের থেকে টাকা নেওয়ার মত প্রতারনার অভিযোগ ওঠে 'অমর সংঘে'র সুমন চক্রবর্তীর নাম ,যার নেপথ্য ভূমিকায় নাম জড়ায় গৌতম নন্দী ওরফে গদু'রও l চাকরি দেওয়ার প্রতারনায় ঘটনাকে কেন্দ্র করে রেল কোয়ার্টার এর বাসিন্দারা একবার তাকে আটক করে বেঁধেও রেখেছিল ! অবশেষে টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সংঘশ্রী'র সদস্যরা তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় । প্রতারিত বিজয় ঠাকুর,জেঠিয়ার বাসিন্দা গৌতম দাস বীজপুর থানায় অভিযোগ জানায় গদু'র নামে । আরও জানা গেছে, কালীপুজোয় পাড়ার কেউ দাবি মতো চাঁদা না দিলে সেই বাড়ির টুনি লাইট ছেঁড়া, ফুলের টব ভাঙা'র মতো একাধিক ছিচকেমির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে । ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত হালিসহর আদর্শ বিদ্যাপীঠ স্কুলের সামনে গদু'র নামে ত্রাস তৈরী হয়েছিল l যুবতী মেয়েদের কটূক্তি থেকে পাড়ায় দাদাগিরি চালানো, প্রায়শই ছুটখাট গণ্ডগোল বাধানোর একাধিক অভিযোগ রয়েছে স্বঘোষিত সমাজসেবী গদু'বাবুর বিরুদ্ধে -- জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রতিবেশী । কিন্তু পরিবর্তনের হাওয়া জোরদার হবার পর গোটা রাজ্যে সিপিএমের ক্ষমতা কমে যাওয়াতে গদু ক্রমশ কোনঠাসা হয়ে পড়ে l বেশ কয়েকবছর তার দৌরাত্ম্য ছিল বন্ধ , স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেন স্থানীয় বাসিন্দারা l কিন্তু গত দু'বছর ধরে সাঙ্গপাঙ্গ জুটিয়ে জোড়াপুকুরে ফের পুরোনো সেই ত্রাস ও ক্ষমতা ফিরে পেতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে গদু। যা এলাকার তৃণমূল ভাবাদর্শে বিশ্বাসী কিছু যুবক মেনে নিতে পারছে না ,আর সেই কারণেই এই হামলার ঘটনা - এমনটাই বিশ্বস্তসূত্রের খবর । এই গোলমালের ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকে আটক করেনি । এদিকে গদু'বাবু এলাকায় ঠিক কি ধরণের সেবামূলক কাজকর্ম করেন, যার বিরোধিতা করছে সমাজবিরোধীরা তাও সঠিকভাবে সংবাদমাধ্যমের সামনে খোলসা করতে পারেননি তিনি l এনিয়ে হালিশহরে ব্লক স্তরের তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, "হালিশহরে শান্তি রয়েছে , কোনো রাজনৈতিক বা দুষ্কৃতীরাজ এখানে নেই । কেউ কেউ ব্যক্তিগত সমস্যা টেনে এনে দুষ্কৃতীর দৌরাত্ম্য বলে চালাতে চেষ্টা করছেন ঠিকই, কিন্তু এভাবে শান্ত হালিশহরকে অশান্ত করা যাবে না l কারণ মাথায় রাখতে হবে সাধারণ মানুষ কিন্তু এখন অনেক সচেতন ।"
No comments