মমতাকে দোষারোপ :সিবিআই নিয়ে মুখে কুলুপ মুকুলের
সাতদিনের সমাচার : অবশেষে গতকাল নিজাম প্যালেসে সিবিআই গোয়েন্দারা মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করলেন মুকুল-মির্জাকে। কি জবাব পেলেন এটা অবশ্য তারাই জানেন। কারণ জেরা শেষে বেরিয়ে এসে সংবাদমাধ্যমের কাছে এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাইলেন না মুকুলবাবু l যথারীতি সিবিআই কর্তাদেরও মুখে কুলুপ।
'কেস'টা বরং আরও একবার ফিরে দেখা যাক - তখন মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেসের 'সেকেন্ড ইন কম্যান্ড'। পরিচয় গোপন রেখে গোপন ক্যামেরা নিয়ে ম্যাথু এলেন তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের ডেরায়। কাজ শেষ করে সেসব সাক্ষাতকারের ভিডিও-টেপ সংবাদমাধ্যমে ছাড়লেন। আমজনতা প্রশ্ন তুললে ভিডিও 'ভুয়ো' বলে দাবি করলেন খোদ দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। কিন্তু বিরোধীরা নাছোড়বান্দা । বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা অমিত শাহ ও কৈলাশ বিজয়বর্গীয়রা বললেন 'ভাগ মুকুল ভাগ'। এরপর দলে কোনঠাসা মুকুল সত্যিসত্যি ভেগে এলেন বিজেপিতেই । তখন আবার রাজ্যজুড়ে কানাঘুষো হল, সিবিআইয়ের হাত থেকে বাঁচতেই মুকুল বিজেপিতে গেছেন। কিন্তু এখনও কেন মুকুলের পিছু ছাড়ছে না সিবিআই! মুকুল আজও জোর গলায় বলছেন, তিনি ম্যাথুর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, 'এটা কেউ কোনওদিন প্রমাণ করতে পারবে না।'
এদিকে সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই জেরায় জেরায় জেরবার করেও 'ঘুষ কেলেঙ্কারি'তে প্রমাণ সহ কাউকে কোর্টে তুলতে ব্যর্থ বলেই খবরে প্রকাশ। সম্প্রতি আদালত সিবিআইকে তদন্ত শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে।
উঠে পড়ে লেগে 'অসহযোগিতা'র অভিযোগে(?) 'নারদ মামলা'য় প্রথম গ্রেফতার করা হয়েছে এস এম এইচ মির্জাকে। ম্যাথুর ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল মুকুল তাঁকে বলছেন মির্জার সাথে দেখা করতে। এরপর মির্জার টাকা নেওয়ার ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই, 'রটে গেল ক্রমে মুকুল-মির্জা যাবেন জেলের অন্দরে।' কিন্তু কোথায় কি! সেই জেরা চলছে অনন্তকাল ধরে!
মির্জাকে সিবিআই গ্রেফতার করায়, সম্প্রতি ফের নড়েচড়ে বসেছে বাংলার মানুষ। তারা সিবিআইয়ের হয়ে মুকুলের জন্য প্রশ্ন সাজিয়েছেন,
আপনি ম্যাথুকে মির্জার কাছে কেন পাঠিয়েছিলেন? প্রথম প্রশ্নের জবাবে মুকুল প্রকাশ্যেই বলেছেন, উনি ব্যবসা করবেন বলায়।
মুকুলের জন্য দ্বিতীয় প্রশ্ন, মির্জা নাকি বলেছেন, মুকুলের হয়ে ব্যবসার কাজে সহযোগিতার জন্য অর্থ নিয়েছিলেন মির্জা?
জবাব এড়িয়েছেন মুকুল।
মুকুলের জন্য তৃতীয় প্রশ্ন, একজন সরকারি আধিকারিকের কাছে দলের নেতা হিসাবে তিনি কাউকে পাঠাতে পারেন কি?
জবাব, উনি বলেছিলেন, বর্ধমানে ব্যবসা করতে চান। মির্জা তখন ওখানকার এসপি। তাই ওনার কাছে যেতে বলেছিলাম।
মুকুলের জন্য চতুর্থ প্রশ্ন, ম্যথু অর্থ দিলে মির্জা গ্রহণ করেন, এবং ভিডিওতে দেখা গেছে, মির্জা বলছেন 'কাজ হয়ে যাবে'। এরপর এই মির্জাই বলেছেন যে তিনি সমস্ত অর্থ মুকুল রায়কে প্রত্যর্পণ করেছেন। স্বভাবতই আমজনতার কোটি টাকার প্রশ্ন, কাজ করে দেওয়ার জন্য অর্থ নেওয়াটা কি ঘুষ নয়? তাহলে তাঁকে যে অর্থ ম্যাথু দিয়েছিলেন, মির্জার দাবি, তা তিনি মুকুল রায়কে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। যা মুকুল অস্বীকার করেছেন বলেই খবরে প্রকাশ। প্রসঙ্গত, এর মধ্যেই এসে পড়েছিল, দলের কাজে অর্থ নেওয়ার প্রসঙ্গ। তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখার্জি, সৌগত রায়, ড. কাকলি ঘোষ দস্তিদার, শুভেন্দু অধিকারি, সিপিএম নেত্রী অপরূপা পোদ্দার - সকলেই এই বিষয়টিকেই সঠিক বলে চলেছেন।
সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট নয় সিবিআই। তাই চলেছে জেরা। কারণ আদালত এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চেয়েছে।
এদিকে গতকাল সিবিআইয়ের জেরা শেষে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে,জেরা প্রসঙ্গে কিছু না বললেও ('সাব জুডিসিয়াল' বলে এড়িয়ে যান) বিস্ফোরক দাবি করেন। সরাসরি তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দিকে আঙুল তুলে বলেন, তৃণমূলের যে যখন গ্রেফতার হচ্ছে, মমতা তখনি তাঁকে দিয়ে বলাচ্ছেন 'মুকুল রায় এর মধ্যে জড়িত'। এটা তাঁকে হেনস্থা করার চক্রান্ত। যদিও এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য জানা যায়নি এখনও।
No comments