ব্রেকিং নিউজ

কাঁচরাপাড়া পুরসভার উদ্যোগে 'শারদ সম্মান' ও বিসর্জনের 'কার্নিভ্যাল' নিয়ে প্রশ্ন

সাতদিনের  সমাচার : বেশ কয়েক বছর ধরেই কাঁচরাপাড়া শহর হয়ে উঠেছে 'বিজ্ঞাপন নগরী'। শহরে সম্ভবত একটিও ল্যাম্প পোস্ট পাওয়া যাবে না, যেখানে কোন না কোন বেসরকারি স্কুল থেকে ব্যবসায়িক বা রাজনৈতিক দলের বিজ্ঞাপনের ফেস্টুন, হোর্ডিং বা বোর্ড পাওয়া যাবে না। স্রেফ ইচ্ছামত লটকে দিলেই হল। পুজোর মরশুমে যা তুঙ্গে পৌঁছল এলাকার 'বিগ বাজেটে'র পুজো আয়োজকদের বড়  বড় তোরণের মহিমায়। বছরের ৩৬০ দিনের মত পুজোর ৫ দিনে এ কারণেই আরও  দুঃসহ অবস্থা শহরের সড়কপথের। বিজ্ঞাপনদাতাদের দৌলতে ভুক্তভোগী পথচারী থেকে যানবাহন। বোলনেওয়ালা কেউ নেই যে এর‌জন্য কি তথাকথিতরা পুরসভাকে কোন ট্যাক্স দেয়? উত্তর মিলেছে 'দেয় না'। পুরসভা তাহলে ব্যবস্থা নেয় না কেন? এহেন দৃশ্যদূষণ বন্ধ হবে কবে?
গতকালই বাঙালির মহোৎসব ঘিরে কয়েক মাসের প্রস্তুতির রেশে একবছরের জন্য ইতি ঘটল। 'আসছে বছর আবার হবে' বলে নাচতে নাচতে গিয়ে গঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জনের নামে প্রতিমা নামিয়ে রেখে ঘরে ফিরলেন কাঁচরাপাড়ার পুজোর আয়োজকরা। প্রশ্নটা তাঁদের বেশিরভাগেরই। যথারীতি জবাব পান না তাঁরাও।
এরমধ্যেই হয়েছে পুরসভার উদ্যোগে বিসর্জনের 'কার্নিভ্যাল'। যদিও বলতে গেলে ১৬'র পল্লী থেকে মহাজাতি, নবাঙ্কুর, বিশ্বনাথ স্মৃতি সংঘ সহ কাঁচরাপাড়ার কোন বড়সড় পুজোর আয়োজকই তাতে অংশ নেয়নি। 
এই নিয়ে এক প্রশ্নের দায়সারা জবাবে খোদ পুরপ্রধান সুদামা রায় বলেন, হতে পারে রাস্তায় থাকা এইসব তোরণ বিসর্জনের শোভাযাত্রায় বাধা হবে বলেই  অনেকে কার্নিভ্যালে যোগ দেয়নি। মাত্র ৮/৯টি মাঝারি মাপের আয়োজক ক্লাব অংশ নিয়েছে বলে তিনি জানান। এলাকায় দুর্গাপুজোর সংখ্যা যেখানে প্রায় দেড়শো। বলাকা ক্লাবের কর্তা পিন্টু পোদ্দার আবার বলেন, তাঁরা প্রতিমা বিসর্জন দিতে ঐ পথেই যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁরা কার্নিভ্যালে অংশগ্রহণকারী কিনা, তা জানেন না। পুরসভার তরফে কিছুই জানায়নি। অন্যদিকে ১৬'র পল্লীর সম্পাদক তরুণ মণ্ডল বিসর্জনের যাত্রায় হাঁটতে হাঁটতে বলেন, 'প্রতিমা, মণ্ডপ, আলো আর পুজোর ভোগেই সব টাকা শেষ। শোভাযাত্রা করার মত অর্থ নেই।' একই সুরে মহাজাতির কর্ণধার তথা এলাকার তৃণমূলের শীর্ষ নেতা খোকন তালুকদারও বলেন, অর্থের কারণেই তাঁরা কার্নিভ্যালে অংশ নেবেন না। সেই হিসাবে কার্নিভ্যাল ব্যর্থ। পরমুহূর্তেই এই সংক্রান্ত আরেকটি প্রশ্নের জবাবে তিনি আমাদের প্রতিনিধিকে সাফ বলেন, থানায় পুলিশকর্তা, পুরকর্তা ও ক্লাবকর্তাদের বৈঠকেই রাস্তায় তোরণ করতে নিষেধ করা হয়েছিল কিন্তু কেউ মানেনি।
সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের সাংবাদিক প্রশ্ন ছোঁড়েন, কি ব্যবস্থা নেবেন ওদের বিরুদ্ধে? পুরপ্রধান বলেন, প্রশাসনের সাথে বৈঠকের পর বলব।
কিন্তু তাঁর কথাতে এটা পরিষ্কার যে পুলিশ কিছু করলে করবে, তাঁরা কিছুই ব্যবস্থা নেবেন না।
ডেঙ্গু থেকে নির্মাণ বিষয়ে পুরকর্তাদের পরিকল্পনার গাফিলতি নিয়ে এমনিতেই বিস্তর অভিযোগ সাধারণ মানুষের পাশাপাশি খোদ তৃণমূলের অন্দরেও। তৃণমূলের হাতেই কাঁচরাপাড়ার পুরবোর্ড। পুরপ্রধান তৃণমূলেরই। তাঁর বিরুদ্ধে সর্বশেষ অভিযোগ, তিনি দলবাজি করেন পুরসভায় বসেও। তাঁর পছন্দের ঠিকাদার তথা তৃণমূলেরই কয়েকজন নেতা-নেত্রীর সঙ্গে প্রায় রোজই তাঁর নিজস্ব কক্ষে ঘন্টার পর ঘন্টা বৈঠক করেন বলে অভিযোগ। 'শারদ সম্মান' প্রদান মঞ্চে এহেন বিশিষ্টজনের (!) উপস্থিতি নিয়েও তাই উঠেছে প্রশ্ন। পুরসভা পুরস্কার দিচ্ছে, অথচ পুরকর্তাদের পিছনে রেখে, পুরোভাগে কেন থাকতে দেখা যাচ্ছে পুরসভার ঠিকাদার তথা তৃণমূল নেত্রী শম্পা শীল ও স্থানীয় তৃণমূল তথা আইএনটিইউসি নেতা মিন্টু সামন্তকে? 
আশা করা যায়, খুব শীঘ্রই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মত কাঁচরাপাড়াবাসী তাঁদের এই প্রশ্নের জবাব পুরপ্রধান সুদামা রায়ের মুখ থেকেই শুনতে পারবেন।

No comments