ব্রেকিং নিউজ

দুঃখ নিয়েই ইহলোক ছাড়লেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা নরেন দে

সাতদিনের সমাচার : দীর্ঘদিন রোগভোগের পর প্রয়াত হলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা নরেন দে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, শয্যাপাশে ছিলেন কনিষ্ঠপুত্র সুব্রত দে সহ পরিবারের সকলেই। এরপর পারিবারিক চিকিৎসক  বিকেল ৪টে নাগাদ তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। প্রবীণ এই কংগ্রেস নেতার মৃত্যুতে কাঁচরাপাড়ার রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর রমেশ গোস্বামী রোডের বাসভবনে ছুটে আসেন কাঁচরাপাড়ার কংগ্রেস নেতা অরুণ চৌধুরী, রানা চক্রবর্তী, মৃণাল ঘোষ,শিবনাথ চক্রবর্তী'র মত কংগ্রেসের নেতাকর্মীরা। শহর কংগ্রেস সেবাদলের পক্ষ থেকে বিকাশ মল্লিক, কৃষ্ণাদ্রি বিশ্বাস, প্রবীর মুখার্জি প্রমুখ মরদেহে  দলীয় পতাকা দিয়ে সম্মান জ্ঞাপন করেন। শহর কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও সভাপতি গৌতম হাজরা প্রয়াত নেতার দেহ জাতীয় কংগ্রেসের পতাকা দিয়ে ঢেকে দেন। দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় মৃতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। 'প্রবীণ কংগ্রেস নেতা নরেন দে অমর রহে' ধ্বনি এবং পোস্টারে এলাকা ছেয়ে যায়। প্রয়াত নেতাকে তাঁর বাসভবনে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হতে দেখা যায়, সিপিএমের দুই নেতা শম্ভু চ্যাটার্জী ও দেবাশিস রক্ষিতকে। আবার তৃণমূল কংগ্রেসের অলোকময় লাহিড়ী, সোনালী সিংহ রায়, দিলীপ ঘোষ, সুজিত দাস, আলোরানী সরকার, চন্দন ভৌমিক এছাড়াও কাঁচরাপাড়ার পুরপ্রধান সুদামা রায়, উপ পুরপ্রধান মাখন সিনহা প্রমুখ তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায় প্রবীণ রাজনীতিক গোবিন্দলাল মৈত্র, সঞ্জিত রায়, অম্বিকা প্রসাদ, ডাক্তার বিশ্বকল্যাণ রায়, সাংবাদিক তমাল সাহা ও সমীর রায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানান, বীজপুরের বিধায়ক, বিজেপি নেতা শুভ্রাংশু রায় প্রতিনিধি মারফত তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। প্রসঙ্গত, নরেন দে শুধু কাঁচরাপাড়া পৌরসভায়  নির্বাচিত কংগ্রেস প্রতিনিধিই ছিলেন না, আজীবন কংগ্রেস অন্তঃপ্রাণ লড়াকু নরেন দে কাঁচরাপাড়া শহর কংগ্রেসের সভাপতিও ছিলেন বেশ কয়েক বছর। ছিলেন উত্তর ২৪ পরগণা জেলা কংগ্রেস, পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস, এমনকি এআইসিসি-র সদস্য পদেও আসীন হয়েছিলেন। আপাত শান্ত মানুষটি তাঁর নম্র-সভ্য ব্যবহারের জন্য এলাকার  রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী ছাড়াও প্রতিবেশী ও বহু মানুষের প্রিয়জন ছিলেন। এখনও  সমসাময়িক এলাকার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা তাঁর কার্যকলাপ নিয়ে স্মৃতিচারণ করে থাকেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের নির্ভীক সৈনিক, বীজপুরের  প্রাক্তন বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিপিনবিহারী গাঙ্গুলীর 'ভাবশিষ্য' হিসেবে আখ্যা দেয়া হয় প্রয়াত নেতাকে।  স্মৃতিচারণে নরেনবাবু বলতেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তিনি কলকাতায় শিয়ালদহের কাছে থাকা অনুশীলন সমিতির কার্যালয়ে মাঝেমধ্যেই যেতেন। কংগ্রেসের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাঁকে একাধিকবার বিরোধী দল সিপিএমের হাতে লাঞ্ছিতও  হতে হয়েছে। বয়সের ভারে ক্রমশ অথর্ব হয়ে পড়ছিলেন। তাঁর পরিবারের সদস্য এবং কাঁচরাপাড়ার কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের অনুযোগ, কাঁচরাপাড়া ঘটক রোডের কংগ্রেস ভবন দখল হয়ে যাওয়ার কথা শুনে তিনি খুব দুঃখ পেয়েছিলেন। আমৃত্যু তাঁর আশা ছিল, দখলকারীরা বর্তমান কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে তা ফিরিয়ে দেবেন। যদিও তেমন কোনও ঘটনা তিনি দেখে যেতে পারলেন না।  তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বহু কর্মকাণ্ডের সাক্ষী সেই ভবনে শব হয়েও স্পর্শ করে যেতে পারলেন না, এই অনুযোগ করেছেন এদিন  অনেকেই। সারাদিন কালো মেঘে ঢাকা আকাশ থেকে ঝির ঝিরে বৃষ্টির মধ্যে তাঁর মরদেহ ওয়ার্কশপ রোড, গান্ধী মোড়, লক্ষী সিনেমা, লিচুবাগান, জোড়ামন্দির, মিলন নগর, বাগমোড় হয়ে হালিশহর শ্মশান ঘাটে অন্তিম সংস্কারের  জন্য পৌঁছায়। তবে বৈদ্যুতিক  চুল্লিগুলি বন্ধ থাকায় স্থানীয় বহু মানুষদের মত অসুবিধায় পড়তে  হয় নরেনবাবুর পরিবারকেও।

No comments