লক ডাউনের মধ্যেই রাতারাতি স্থান পরিবর্তন ! : প্রকাশ্য স্থান থেকে রেশন দোকান গলিপথে কেন জবাব চাইছেন ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
সাদিনের সমাচার : প্রকাশ্য স্থান থেকে বিনা নোটিশে সরে গেল রেশন দোকান, আর তার জেরেই ধুন্ধুমার কাণ্ড জেঠিয়া বাজারে l জানা গেছে, জেঠিয়া বাজারের রেশন ডিলার প্রয়াত নরেশ চন্দ্র ঘোষ এর রাজীব ঘোষ দীর্ঘসময় পিতার নামেই রেশন দোকান চালাতেন l জেঠিয়া বাজারের প্রাণ কেন্দ্র কালীপদ কমপ্লেক্স সংলগ্ন এই রেশন দোকান থেকেই বছর বছর যাবৎ রেশন তুলে আসছেন স্থানীয় মানুষজন l কিন্তু হঠাৎ কোনও নোটিশ ছাড়াই দোকানটি সরে গেল প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একটি গলির মধ্যে অর্থাৎ অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভাড়া দেয়া লজ গৃহশ্রীর সামনে থেকে সরে গিয়ে রেশন শপ চলে গেল আরও উত্তর দিকে লেভেল ক্রসিং গেটের আগে কাত্যায়নী চশমার দোকানের গলিতে !
কিন্তু এই লক ডাউনের বাজারে হটাৎ এই স্থান পরিবর্তন, আর একমাস আগে থেকে কোনও নোটিশ ছাড়াই একটা গণবন্টন ব্যবস্থাকে প্রকাশ্য স্থান থেকে অদূরের এক গলিতে নিয়ে যাওয়া হল কোন স্বার্থে ?- এই প্রশ্ন তুলে বেজায় চটেছেন ওই রেশন দোকানের গ্রাহকেরা l রেশন তুলতে আসা কয়েকজন প্রৌঢ় ব্যক্তি বলেন,'রাতারাতি এইভাবে একটা বন্টন ব্যবস্থাকে সরিয়ে ফেলা যায় কী ? ডিলারদের উচিত অন্তত একমাস আগে থেকে গ্রাহককে জানানো! তাছাড়া আমাদের মতো অবসরপ্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ যারা রেশন তোলার কাজটি করি, আমরা তো রীতিমতো বিপাকে ! গ্রীষ্মকাল আসছে,আমাদের পক্ষে অতদূর গিয়ে লাইন দিয়ে রেশন তোলা সহজসাধ্য হবে কী করে ? আবার অনেক গ্রাহক ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলছেন,'আসলে এখানে গ্রাহকদের ঠিকঠাক ঠকানো যাচ্ছিল না, লোকজন ধরে ফেলছে, মাল পাচার করা যাচ্ছে না, দূরের গলিতে আটকাবার কেউ রইল না, ইচ্ছেমতো মাল খোলা বাজারে পাচার করতে পারবে, গ্রাহকদেরও ঠকানো সহজসাধ্য হবে' l তবে এ নিয়ে রেশন ডিলার নরেশ ঘোষের পুত্র রাজীব ঘোষের সঙ্গে কোনওভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি, তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক প্রতিনিধি জানালেন,'পুরোনো দোকানের সামনে ছোট করে কাগজে লিখে সাঁটিয়ে দেয়া হয়েছিল তো, তাছাড়া পঞ্চায়েত প্রধানের অনুমতি নিয়েই এই কাজ করা হয়েছে!' অথচ পঞ্চায়েত প্রধান শিয়াঙ্কা ঘোষ কিন্তু বলেছেন তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না ! এ নিয়ে সমাচার সাতদিনের প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব থেকে জেলা পরিষদ সদস্যা তৃপ্তি ঘোষ সকলেই ক্রেতাদের পক্ষে সহানুভূতি দেখিয়েছেন এবং গ্রাহক সাধারণকে আশ্বাস দিয়েছেন বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে l একই কথা বলছেন,
তৃণমূল নেতা ভুবন কর এবং তীর্থ মুখার্জীও l তৃপ্তিদেবী আরও জানালেন,'পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, গণবন্টন ব্যবস্থাতে কোনও সাধারণ মানুষ যাতে রেশন পেতে বঞ্চিত না হয়, এমনকি যাদের কার্ড নেই, তারাও এই লকডাউনের বাজারে রেশন পাবে, যদি কোনও অসাধু ব্যক্তি সরকারি খাদ্যদ্রব্য নিয়ে অসৎ কাজ করেন, কালোবাজারিতে মদত দেন, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে l তিনি আরও বলেন, 'গণবন্টন কর্তৃপক্ষ এবং রেশন অফিসারদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, রেশন দোকানগুলোর উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে, পাশাপাশি গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখে একমাসের মধ্যে নতুন জায়গা দেখে রেশন দোকান সরিয়ে আনতেই হবে রাজীব ঘোষকে l'
. প্রসঙ্গত, গত সোমবার বীজপুর থানার বালিভাড়া এলাকায় রেশন ডিলার নিখিল মুখার্জী বিরুদ্ধে আটা পাচারের মতো মারাত্মক অভিযোগ উঠেছিল, স্থানীয় মানুষজন ভ্যান সমেত বেশ কয়েক কুইন্টাল আটার বস্তা হাতেনাতে ধরে ফেলে পাচাররত অবস্থায় l পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বস্তাগুলি থানায় নিয়ে যায় l জেঠিয়া পঞ্চায়েতের ক্ষুব্ধ মানুষজন আরও বলছেন, 'লকডাউনের বাজারে সরকার যেখানে বারবার বলছে চাল-আটার যোগান দিতে হবে, সেখানে এক রেশন দোকান মালিক নিখিল মুখার্জি আমজনতাকে ফাঁকি দিয়ে মাল পাচার করছিলেন, আবার জেঠিয়া বাজারের প্রায় পঞ্চাশ বছরের রেশন দোকান নরেশ ঘোষের ছেলে রাজীব ঘোষ একই কায়দায় কারসাজি শুরু করেছে ! মাথায় রাখুন পাবলিকের মার্ কিন্তু দুনিয়ার বার !
No comments