'প্রভাতে'র 'রবি' অস্ত গেলেন
সাতদিনের সমাচার : প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক রবীন্দ্রকুমার শর্মা। সব্বার প্রিয় রবিদা । ১২ মে, মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ কাঁচরাপাড়ার গৌরবাবু রোডের বাসভবনে অসুস্থ অবস্থায় ইহলোক ত্যাগ করেন সত্তরোর্ধ্ব রবি শর্মা। শুরুর দিনগুলোতে হিন্দি দৈনিক সন্মার্গ ছাড়াও বিভিন্ন হিন্দি ভাষার পত্রপত্রিকাতে নিয়মিত লেখালিখি করেছেন, পরবর্তীতে 'প্রভাত খবর' এ গোটা নদীয়া জেলার সংবাদ প্রতিনিধির দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট ছিলেন। স্ত্রী'র অকাল প্রয়াণ তাকে প্রবল বিচলিত করলেও সংবাদদাতা হিসেবে সংবাদ সংগ্রহে যেমন তিনি কার্পণ্য করেননি তেমন কর্মজীবনে রবিবাবু নিজের লেখা নিয়ে কখনও আপস করেননি। বহু সংগঠন বিভিন্ন সংস্থা তাঁকে সম্মান জানিয়েছে শুধুমাত্র তাঁর কর্তব্যনিষ্ঠার কারণে l ২০১৮ সাল থেকেই অসুস্থতা ক্রমশ গ্রাস করছিল তাঁকে, তবুও দাঁত চেপে লড়ে গেছেন সংবাদ সংগ্রহে, কিন্তু গত বছর দুর্গাপুজোর পর থেকে তিনি নিয়মিত সংবাদ প্রেরণে বিরত থাকতে শুরু করেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।চলছিল উপযুক্ত চিকিৎসাও। সদাহাস্যময় মানুষ রবি'দা মৃত্যুকালে রেখে গেলেন একমাত্র পুত্র সন্তান রাকেশ শর্মা, দুই নাতি সহ পুত্রবধূ বিবাহিত কন্যা প্রতিমাকে l রবীন্দ্র শর্মার প্রয়াণে বীজপুরের সংবাদ তথা সাংবাদিকমহল গভীরভাবে শোকাহত।
রবিদাকে যেমন দেখেছি
সোনালী ব্যানার্জী : খাদ্যরসিক, আমোদপ্রিয়, সরলসাধা, আড্ডাবাজ, মিশুকে কিন্তু কাজের বেলা ১০০শতাংশ সিরিয়াস মানুষ ছিলেন রবিদা l মাত্র ১৫ বছরের নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ l কাঁচরাপাড়ার আঞ্চলিক সিপিএম কর্মীদের আয়োজনে এক রাজনৈতিক সভায় সেদিন তরুণতুর্কি সংবাদকর্মী প্রসেনজিৎ বিশ্বাস রবি'দার সঙ্গে প্রথম আলাপ করিয়ে দেন l প্রথম সাক্ষাতেই বুঝেছিলাম বুড়ো বেশ রসিক l পরবর্তীতে অন্তত দশ হাজারবার একসাথে কাজের সূত্রে ছুটে বেড়িয়েছি !
2007 সালে সমাচার সাতদিন -এর জন্ম হবার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে তার ভালোমন্দেও জড়িয়ে ছিলেন রবিদা l মজার বিষয়, আমন্ত্রিত অথচ উপযুক্ত সম্মান না পেলেই সেই ব্যক্তি বা সংস্থার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের তুলোধোনা করতেন তিনি l অর্থাৎ পরিস্থিতির সঙ্গে আপোষ করা তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ ছিল বলা যায় l প্রয়াত সাংবাদিক বিদ্যুৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রবি শর্মা'র হাজার মতের অমিল থাকলেও অন্তত এই জায়গাতে দুজনেই একমেরুতে অবস্থান করেছেন বরাবর l বিদ্যুৎদা কবেই চলে গেছেন একরাশ অভিমান নিয়ে, রবি'দাও গেলেন !
জেলা সংবাদ জগতের খুঁটি সরে যাচ্ছে একে একে, দেবাশিসদা (রায়) তবু লড়ে যাচ্ছেন পুরোনো ছন্দকে ধরে রাখতে, আমিও সেই পথের পথিক l নতুন সংবাদ কর্মীরাদের অনেকেই গ্ল্যামার নিয়ে ব্যস্ত, খবরের সংজ্ঞা তাদের কাছে কেবল লোগোওয়ালা বুম নিয়ে, গলায় প্রেস কার্ড ঝুলিয়ে, প্রেস লেখা গাড়ি নিয়ে দু' চারটে অবান্তর প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া ! --যার ঘোরতর বিরোধী ছিলেন রবিদা'দের মতো মানুষজন l সারাজীবন সাইকেল নিয়েই ছুটে গেছেন অবিরাম l দ্রুত দিন বদলাচ্ছে, বদলাচ্ছে সাংবাদিকরাও, কেমন স্বাধীনতাহীন একপেশে মানসিকতা গ্রাস করছে সংবাদজগৎকে, বাড়ছে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা, কাদা ছোঁড়াছুড়ি এবং সমন্বয়ের প্রবল অভাব l যার সুযোগ নিচ্ছে প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতারা !
নিজেদের সাংবাদিক না বলে সংবাদ কর্মী বলতে পছন্দ করা রবিদা'রা বোধহয় মরে গিয়ে বেঁচে গেলেন, আমরা আর কতদিন পারব আপনাদের ধারা টেনে নিয়ে যেতে ? জানি না !!!
No comments