ব্রেকিং নিউজ

কাঁচরাপাড়া রেলওয়ার্কশপ* অবসর নিলেই সেকশনে দিতে হচ্ছে "তোলা" : হুমকির মুখে আতঙ্কিত প্রতিবাদী রেলকর্মীরা !

সাতদিনের সমাচার : চাকরি জীবন থেকে অবসর নিয়েও রক্ষে নেই ! দিতে হচ্ছে মোটা টাকা তোলা ! যত দিন যাচ্ছে তোলার অঙ্ক বেড়েই চলেছে ক্রমশ! দিনের পর দিন কাঁচরাপাড়া রেল ওয়ার্কশপের বিভিন্ন বিভাগে অবসরকালীন এই 'তোলাবাজি' সংক্রান্ত চরম অব্যবস্থা নিয়ে ক্ষিপ্ত সাধারণ শ্রমিক কর্মচারীরা অভিযোগে সরব হয়েছেন l অথচ সেক্শনের 'ফেয়ারওয়েল কমিটি'র মাথায় বসে থাকা নেতা গোছের ব্যক্তিরা দিনের পর দিন তাদের স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছেন বেমালুম l 'লোকোমোটিভ' হোক বা 'ক্যারেজ এন্ড ওয়াগন'  দেড়শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কাঁচরাপাড়া ওয়ার্কশপের শ্রমিকদের অবসরকালীন সময় 'তোলা' দেয়ার অভিযোগ অতীতে ততটা প্রকাশ্যে না আসলেও ইদানিংকালে এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে মুখ খুলছেন ক্ষুব্ধ কর্মীরা l সম্প্রতি লোকোমোটিভ বিভাগের ৯এ ট্রান্সফর্মা সেকশনের একটি অপ্রীতিকর ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই নড়চড়ে বসেছে শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে শপের কর্মকর্তারাও l 
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পদস্থ কর্মী  জানিয়েছেন, "আসলে যে শ্রমিক অবসর নেন, ফেয়ারওয়েল দেওয়ার শর্ত হিসেবে তার কাছে ১০০০০ থেকে ৩০০০০ টাকা পর্যন্ত দাবি করা হয়ে থাকে, এছাড়াও সেক্শনের প্রত্যেকটি কর্মীর কাছ থেকেও ওই ব্যক্তির ফেয়ারওয়েল বাবদ ১০০/১৫০ টাকা চাঁদা তোলা হয়, যিনি অবসরপ্রাপ্ত হচ্ছেন চাঁদার টাকায় তাকে সামান্য কিছু উপহার এবং একটা স্মারক তুলে দিয়ে,বাকি টাকা এবং ওই ব্যক্তির প্রদেয় টাকা দিয়ে খানাপিনার নামে দেদার মোচ্ছব চলে, মোচ্ছবে পানীয় থেকে শুরু করে অন্যান্য নেশার সামগ্রীও উপস্থিত থাকে  কারখানার ভিতরেই ! হিসাবপত্র স্বচ্ছ থাকে না বলে উদ্বৃত্ত টাকা ঢুকে যায় ফেয়ারওয়েল কমিটির  মাথাদের পকেটে, অন্যান্যরা ঝুট ঝামেলা হিসাব-কিতাব থেকে দূরে থাকেন বলে মন্তব্য করেন না, কিন্তু দিন দিন চাহিদার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে কমিটির মাথাদের, মানুন বা না মানুন এটাই ওয়ার্কশপের বেশিরভাগ সেকশনের 'ফেয়ারওয়েল কমিটি'র নগ্ন চিত্র!" তিনি আরও বলেন, আগে ট্রেড ইউনিয়ন নেতারাও থাকতেন এই ফেয়ারওয়েল কমিটির বিভিন্ন পদে, কিন্তু বর্তমানে তারাও এ ব্যাপারে মাথা ঘামান না, ফলে সোনায় সোহাগা !" 
লোকোমোটিভ বিভাগের ৯এ ট্রান্সফর্মা সেকশনের ঘটনাটাও এই কেন্দ্রিক, প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন জানালেন, "সম্প্রতি আলাউদ্দিন নামে এক সহকর্মী অবসর নিলে তার কাছে তোলা চাওয়া হয়, নাসির নামে এক কর্মী কিছুদিন আগে অবসর নিলে তার কাছেও একই ভাবে মোটা টাকার দাবি করে সেকশনের ফেয়ারওয়েল কমিটির মাথা চন্দ্রশেখর ব্যানার্জী (লাল্টু) এবং সুব্রত মুখার্জী, কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের মধ্যে আলাউদ্দিনবাবু  দাবিমতো টাকা দিতে অস্বীকার করলে তার ফেয়ারওয়েল বন্ধ হয়ে যায়, নাসিরবাবুর ক্ষেত্রে ফেয়ারওয়েল এর জন্য অন্যান্য কর্মীদের কাছে চাঁদা চাইতে গেলে ক্ষুব্ধ কর্মীরা চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন, তারা সাফ জানান, স্বতঃস্ফূর্তভাবে যারা যে টাকা দেবেন, সেটাই নিয়ে তাকে ফেয়ারওয়েল দিয়ে দেয়া উচিত কিন্তু তা না করে টাকা তুলে মোচ্ছব চলবে দেদার, এই প্রথা মেনে নেয়া যাবে না, সাধন মুখার্জী,অমিত ব্যানার্জীর মতো কর্মীরা এই প্রথার প্রতিবাদ করলে   লাল্টু এবং সুব্রত মুখার্জীরা যারা ফেয়ারওয়েল কমিটির চেয়ার আঁকড়ে বসে আছেন বাম আমল থেকে,তারা ওই প্রতিবাদী কর্মীদের তেড়ে মারতে যাওয়া, সময়মতো দেখে নেয়া এমনকি অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন! সেক্শনের অন্যান্য কর্মী সাধারণ সবাই লাল্টু এবং সুব্রত'বাবুর অন্যায় কাজের বিহিত চাইছেন, কেননা অমিত এবং সাধনবাবুরা নির্বিবাদী মানুষ, তাদের তেড়ে মারতে যাওয়াটা আমরা কেউ মেনে নিতে পারবো না l" 
এ ব্যাপারে 'ইআরটিএমসি'র পক্ষে কাঁচরাপাড়ার তৃণমূল নেতা খোকন তালুকদার সমাচার সাতদিন'কে বলেন,"আমি অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখছি কী ঘটেছে, এই অন্যায় কোনোভাবেই মেনে নেয়া যাবে না, তাছাড়া লাল্টু বা সুব্রত মুখার্জী কত বড় মাস্তান হয়েছে, সেটাও দেখছি !" কারখানার অনেকেই বলেছেন, "লাল্টু ব্যানার্জি সিপিএম কর্মী হিসেবে পরিচিত, কাঁচরাপাড়ার সরগম ক্লাবের সদস্য হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন এলাকায় 'গা-জোয়ারি' ছিল ওর, ওকে কেউ সহসা ঘাঁটায় না l" কাঁচারাপাড়ার এক প্রবীণ সিপিএম নেতা বলেছেন, "ওটা রেল কারখানার অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, তাছাড়া যদি কেউ আমাদের দলের নাম ভাঙিয়ে অন্যায় করে সেক্ষেত্রে আমরা কোনও ব্যবস্থা নিতে পারি, কিন্তু যা শুনলাম তাতে ঘটনাটা ব্যক্তিগত এবং রেলপরিসরেই সীমাবদ্ধ l" 
তবে যাই ঘটুক এই কুপ্রথা'কে সমর্থন কেউ করছেন না, রেলের অধিকারিকরাও এ নিয়ে মন্তব্য করতে না চাইলেও একবাক্যে তীব্র নিন্দা করেছেন l এখন অবসরকালীন তোলাবাজির জল কতদূর গড়ায়, সেটাই দেখার l

No comments