ব্রেকিং নিউজ

"চড়ক" সংক্রান্তি : অন্যতম সেরা একটি লোকৎসব

সাতদিনের প্রতিবেদন : "চড়ক সংক্রান্তি" বা চড়ক পুজো  হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি লোকোৎসব। চৈত্রের শেষ দিনে গ্রাম বাংলা জুড়ে সাড়ম্বরে চলে চড়ক উৎসব। 
বিশেষজ্ঞদের মতে, লিঙ্গপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ সহ একাধিক শাস্ত্রে চৈত্র মাসে শিবের আরাধনা প্রসঙ্গে নৃত্যগীতা'দির উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে সমাজের উচ্চবর্ণের মধ্যে এই উৎসবের প্রচলন পুরাতন নয়। জানা যায়, ১৪৮৫ খ্রিষ্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক নরপতি এই উৎসব প্রচলন করেন। উত্তরবঙ্গের "গম্ভীরা" বা "শিবের গাজন" এই চড়ক উৎসবেরই প্রকারভেদ বলা যেতে পারে।
 বছরভর জলে ডুবিয়ে রাখা  চড়ক গাছটিকে চৈত্র মাসের শেষ দুদিন আগে পুস্করণী থেকে তুলে আনা হয় সাধনা বা পূজার্চনা সহকারে। যে স্থানে চড়ক গাছটি পোতা হয়, সেই স্থানে শুদ্ধাচারে শিবলিঙ্গ পূজিত হয় যা "বুড়োশিব" নামেও পরিচিত। 
পূজোর বিশেষ বিশেষ অঙ্গ হল পিঠে বড়শি বিঁধিয়ে সন্ন্যাসীকে চড়ক গাছের উপর ঘোরানো, জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর দিয়ে হাঁটা, কাঁটা আর এবং ধারালো ফলের ফলার উপর লম্ফঝম্প, অগ্নিনৃত্য   বাণফোঁড়া, "হাজরা" নাচন এবং শিবের বিয়ে । পুজো উপলক্ষে একমাস যাবৎ সন্ন্যাস গ্রহণ করা সন্ন্যাসীদের পিঠে, হাতে, পায়ে, জিহ্বায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে বাণ শলাকা বিদ্ধ করা হয়। জ্বলন্ত লোহার শলাকাও শরীরে ফুঁড়ে দেয়া হয়, যেখানে দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ বলে পরিগণিত l বস্তুত, উৎসবের মূলে রয়েছে ভূতপ্রেত ও পুনর্জন্ম তত্ত্বে বিশ্বাস। এর বিভিন্ন আচার প্রাচীন সমাজে প্রচলিত নরবলির অনুরূপ।
পুজোর উদ্যোক্তারা কয়েকজনের একটি দল নিয়ে গ্রাম ঘুরে বেড়ায়। দলে থাকে একজন শিব ও দু'জন সখী। তাদের সঙ্গে থাকে ঢোল-কাঁসরসহ বাদকদল । বিভিন্ন সাজে সুসজ্জিত হয় 'সং' এর দল l সখীরা গান ও বাজনার তালে ঘুঙুর পরে নাচে। এরা "নীল পাগলের দল"ও বলেও পরিচিত। চৈত্রমাস জুড়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে 'গাজনে'র নাচ-গান পরিবেশন করে। বিনিময়ে দান হিসেবে প্রাপ্ত সামগ্রী পুজোর কাজে ব্যবহৃত হয়। উৎসবকে কেন্দ্র করে উত্তরবঙ্গ ছাড়াও নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ ও তার পার্শ্ববর্তী  এলাকার বিভিন্ন অংশে যেমন নহাটা'র সাতাশি গ্রাম, রাজাপুর, দিঘাড়ী সহ বেশ কিছু গ্রামাঞ্চলের 'চড়ক মেলা' সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করেছে । 
( তথ্য : সংগৃহীত )

No comments