দেড়শো বছর অতিবাহিত কলকাতা ট্রাম পরিষেবার; কমছে রুট - থাকবে নাকি চিরতরে মিউজিয়ামে, মনের কোণে দ্বন্দ্ব
আকাশ ভট্টাচার্য্য : সেই ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৩ - ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, সুদীর্ঘ ১৫০ বছর অতিক্রান্ত কলকাতার সবথেকে সুলভ, নিরাপদ ও দুষণমুক্ত গণ-পরিবহণ 'ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ' থেকে নাম পরিবর্তিত হওয়া আজকের 'কলকাতা ট্রামওয়েজ'। ১৮৭৩ সালের আজকের দিনে শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট রোড পর্যন্ত কলকাতার বুকে প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম পরিষেবা চালু হলেও, তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সে বছরেরই ২০শে নভেম্বর পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়
এরপর ২২ ডিসেম্বর ১৮৮০ সালে লন্ডনে 'ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি' স্থাপিত হয়ে নিবন্ধিকৃত হয়। তারপর ১লা নভেম্বর ১৯৮০ -তে ঘোড়ায় টানা মিটারগেজ ট্রাম চালু হয় শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত ভায়া বউবাজার, ডালহৌসী, স্ট্র্যান্ড রোড। যার শুভ সূচনা করেন তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড রিপন।এরপর যাত্রার গতি বাড়াতে ও ঘোড়ার কষ্ট কিছুটা লাঘব করতে ১৯০২ সালে এসপ্ল্যানেড থেকে খিদিরপুর রুটে (বর্তমানে হেরিটেজ রুট) প্রথম বিদ্যুৎচালিত ট্রাম পরিষেবার সূচনা হয়। এরপর দেখতে দেখতে সুদীর্ঘ দেড়শো বছর অতিক্রম করে আজ মাত্র চারটি রুটে এসে থেকেছে ট্রামের বর্তমান যাত্রাপথ। বর্তমানে ট্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে জাগছে না কোন আশা। ট্রাম পরিষেবা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রায় পাকা, ভাবখানা তো এমনই। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় এখনো যে ট্রাম লাইন দেখা যায়, তা পিচ দিয়ে ঢেকে ফেলার কাজ নাকি শুরু হবে অচিরেই।
অথচ শুধু সাধারণ মানুষের পরিবহনের জন্য সুলভ বলেই নয়, কলকাতার পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, নগরোন্নয়ন সহ পরিকল্পনা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য - সকল দৃষ্টিকোণ থেকেই ট্রামের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিরাট। ঐতিহ্যশালী ও পরিবেশ বান্ধব গণ-পরিবহন হিসেবে ট্রামের গুরুত্ব যে এখনও অপরিসীম ও সে বিষয়ে এ শহর যে এখনও সচেতন, তা বোঝা যায় 'কলকাতা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশন' বা 'ট্রাম যাত্রা'-র মত বিভিন্ন নাগরিকগোষ্ঠীর নানান কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। অথচ আজ কলকাতায় প্রথম ট্রাম যাত্রার দেড়শো বছর পূর্তিতে এসে মনের কোণে দ্বন্দ্ব, ট্রাম কি আদৌ চলবে নাকি তাকে চিরতরে মিউজিয়ামে পাঠানো হবে? উত্তর দেবে সময়।
চিত্র - সোশ্যাল মিডিয়া
No comments